নামাজকে আরবিতে ‘সালাত’ বলে। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের জন্য দিন রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া (অবশ্য করণীয়) ফরজ। নামাজ হচ্ছে দোয়া বা প্রার্থনা, যা তকবির, তাসবিহ, তাহমিদ, ইস্তেগফার এবং দরুদ ইত্যাদিসহ আল্লাহর কাছে সবিনয়ে নিবেদন।
মানুষ তিনটি জিনিস- শরীর, প্রাণ বা জীবনীশক্তি এবং আত্মা দ্বারা গঠিত। মৃত্যু শরীর ও প্রাণকে নিঃশেষ করে দেয়। আত্মা অমর ও অক্ষয়। এ আত্মাই প্রকৃত মানুষ। শরীর বা প্রাণের খোরাক খাদ্য। আত্মার খোরাক নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতে লব্ধ পুণ্য।
১। হাদিস : হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যদি মানুষ জানত যে, আজানের এবং নামাজের প্রথম সারিতে কি পুণ্য আছে এবং যদি তারা তা লটারি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা না পেত, তবে তারা নিশ্চয়ই ভাগ্য খেলা খেলত। যদি তারা জানত যে, জোহরের নামাজে কি পুণ্য রয়েছে, তবে নিশ্চয়ই এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। যদি তারা জানত যে, এশা এবং ফজরের নামাজে কি পুণ্য রয়েছে, তবে নিশ্চয়ই তার জন্য বুকে হেঁটে আসত। (বোখারি, মুসলিম)
২। হাদিস : হজরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন, ফেরেশতা তোমাদের কাছে রাতে এবং দিনে আগমন করে। কিন্তু তারা ফজর এবং আসরের নামাজের সময় মিলিত হয়। যারা তোমাদের কাছে রাতযাপন করে, তারা উপরে উঠলে তাদের প্রভু জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দাদেরকে তোমরা কিরূপ অবস্তায় ত্যাগ করেছ? তারা বলে, নামাজ পড়ার সময় আমরা তাদেরকে ত্যাগ করেছি এবং নামাজ পড়ার সময় আমরা তাদের কাছে গিয়েছি। (বোখারি, মুসলিম)
৩। হাদিস : হজরত হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তাদের মধ্যে এবং আমাদের মধ্যে নামাজই পার্থক্যের বিষয়। যে তা ত্যাগ করে, সে কাফির। (তিরমিজি, নাসায়ি)
৪। হাদিস : হজরত বোরায়দা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তাদের মধ্যে এবং আমাদের মধ্যে নামাজই পার্থক্যের বিষয়। যে তা ত্যাগ করে, সে কাফির। (তিরমিজি, নাসায়ি)
৫। হাদিস : হজরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি নির্ধারিত শাস্তির অপরাধ করেছি। আমাকে তার শাস্তি দিন। নবী করিম (সা.) কিছু জিজ্ঞেস না করতেই নামাজের সময় হয়ে গেল এবং সে নবী করিম (সা.) এর সঙ্গে নামাজ পড়ল। নামাজ শেষে লোকটি ওঠে বলল, আমি নির্ধারিত শাস্তির অপরাধ করেছি আমাকে নির্দিষ্ট শাস্তি দিন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি আমাদের সঙ্গে নামাজ পড়নি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার পাপ বা নির্দিষ্ট অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন। (বোখারি, মুসলিম)
৬। হাদিস : হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি নবী করিম (সা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে কোন কাজ সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বললেন, নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়া। আবার জিজ্ঞেস করলাম, তারে পরে কোন কাজ। তিনি বললেন, পিতা-মাতার বাধ্য হওয়া। পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোন কাজ? তিনি বললেন, আল্লাহ পথে জিহাদ। (বোখারি, মুসলিম)
৭। হাদিস : হজরত আমর বিন শোয়ায়েব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের সন্তানরা সাত বছর বযসে পদার্পণ করলে তাদেরকে নামাজের জন্য আদেশ কর এবং তাদের ১০ বছর বয়স হলে তার জন্য তাদের প্রহার কর এবং পরস্পরকে শয্যা হতে পৃথক করো। (আবু দাউদ)
৮। হাদিস : হজরত উসমান (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে জামাতে এশার নামাজ পড়ে, সে অর্ধেক রাত যেন নামাজের মধ্যে দাঁড়িয়ে রইল। যে ফজরের নামাজ জামাতে পড়ে, সে যেন সমস্ত রাত নামাজ পড়ল। (মুসলিম)