কক্সবাজারের পেকুয়ায় জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে বিয়ের তিন মাসের মাথায় অমানবিক নির্যাতন করে এক কিশোরীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তুলে নিয়ে বিয়ের পরও যৌতুকের দাবিতে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন মধ্যযুগীয় কায়দায় নিপীড়ন চালিয়েছে বলে দাবি নিহতের পরিবারের। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে পরিবারের অন্য সদস্যরা পলাতক রয়েছে।
হত্যার শিকার কিশোরীবধূ সালমা বেগম (১৪) পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের পণ্ডিতপাড়া গ্রামের বাদশার মেয়ে। আটক স্বামী আলমগীর একই উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী গ্রামের জাফর আলমের ছেলে। তিনি অনেকগুলো মামলার আসামি ও বনদস্যু হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
স্থানীয়রা জানান, তিন মাস আগে বনদস্যু আলমগীর উঠিয়ে নিয়ে সালমাকে কাবিননামা ছাড়া বিয়ে করে। মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক হলেও বনদস্যু আলমগীরের টাকা ও সম্পত্তির লোভে এ বিয়ে মেনে নেন সালমার বাবা-মা।
প্রতিবেশীরা জানান, বিয়ের পর থেকে আলমগীর ও তার পরিবারের লোকজন প্রায়সময় কারণে-অকারণে সালমাকে মারধর করত। আলমগীরের ভাই বনদস্যু জাহাঙ্গীর ও বাবা জাফর আলমসহ পরিবারের সদ্যসরা গত ২০ সেপ্টেম্বর যৌতুকের দাবিতে সকালে ও রাতে সালমাকে হাত-পা বেঁধে লোহার রড ও কাঠের বাটাম দিয়ে কয়েক দফা নির্যাতন চালায়। উপর্যুপরি নির্যাতনে সালমা একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে গোপনে চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান আলমগীর, জাহাঙ্গীর ও তাদের বাবা। সেখানে সালমার অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক।
এদিকে চমেকে ভর্তির তিন দিন পর ২৩ সেপ্টেম্বর ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিশোরী সালমা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালে পাঠিয়েছে। খবর পেয়ে চমেক হাসপাতাল এলাকা থেকে ঘাতক স্বামী আলমগীরকে আটক করেছে সিএমপির পাঁচলাইশ থানার একদল পুলিশ। তাকে রাতে পেকুয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
হতভাগী কিশোরী সালমার পরিবার এ ঘটনায় পেকুয়া থানায় বনদস্যু আলমগীর ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। পেকুয়া থানার ওসি (তদন্ত) মাইন উদ্দিন জানান, পাঁচলাইশ থানা পুলিশ সালমার ঘাতক স্বামী আলমগীরকে আটক করার কথা জানানোর পর তাকে পেকুয়া থানায় আনতে রাতে রওনা দেয় পুলিশ। সালমার পরিবার অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গত সাত-আট বছর ধরে উপজেলার পাহাড়ি দুই ইউনিয়ন টইটং ও বারবাকিয়ার গহীন পাহাড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে জাফর আলমের দুই ছেলে বনদস্যু জাহাঙ্গীর ও আলমগীর। আলমগীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কিশোরী মেয়েদের রাতের আঁধারে অপহরণ করে এনে তার আস্তানায় আটকে রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে। কাবিননামা ছাড়াই এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধডজন বিয়ে করেছে আলমগীর। সর্বশেষ তার বলি হলো সালমা নামের এ হতভাগী কিশোরী।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই বিকেলে পেকুয়ার বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালীর সন্তান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী আনসার উদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় জাহাঙ্গীর ও আলমগীরের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী। সন্ত্রাসীরা আনসারের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। বর্তমানে আনসার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।