বাইরে তখন তাণ্ডব চালাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। ভেতরে ক্যাপিটলের সব প্রবেশদ্বার বন্ধ। দরজার দিকে তাক করে বন্দুক উঁচিয়ে নিরাপত্তারক্ষীরা। যেকোনও সময় দরজা ভেঙে ঢুকে পড়তে পারে উগ্র সমর্থকরা। শেষমেশ গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে নিরাপদে ঘরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল সিনেটরদের। বুধবার এমনই নজিরবিহীন রুদ্ধশ্বাস নাটকীয় পরিস্থিতি দেখল যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা।
ভেতরে চলছে সভা। সংসদ ভবনের মধ্যে বিতর্কে মগ্ন আইনসভার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। রয়েছেন সাংবাদিকরাও। ঘটনাচক্রে এই আলোচনার শেষেই ইলেক্টরাল কলেজের ভোটের হিসাবে সরকারিভাবে জো বাইডেন নির্বাচিত হবেন। ট্রাম্পের রিপাবলিকান সিনেটররা এখনও কার্যত পরাজয় মেনে নিতে নারাজ। আলোচনা, বিতর্ক, প্রশ্নোত্তর-এর মধ্যেই চলছে কটাক্ষ, টিকা-টিপ্পনি। তার মধ্যেই বাইরে হট্টগোল। কয়েক হাজার জনতার চিৎকার। তাদের গতিমুখ ক্যাপিটল ভবন। ক্যাপিটলের নিরাপত্তারক্ষীরাও তাদের আটকাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই গণ্ডগোলের খবর তখন পৌঁছে গিয়েছে ভিতরেও।
সিনেটররাও বাইরের দিকে উঁকিঝুঁকি মারছেন বাইরে ঠিক কী হয়েছে, বোঝার জন্য। আমেরিকার ইতিহাসে এমন ঘটনা কোনও দিন ঘটেনি। ফলে তারাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না, কী হয়েছে। তখনও ততটা ‘সিরিয়াসলি’ নেননি সিনেটররা। কিন্তু বিষয়টা যে ট্রাম্প সমর্থকদের ‘হামলা’ সেটা স্পষ্ট হয় যখন একের পর এক দরজা সজোরে বন্ধ করে দিচ্ছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। পর পর ভেঙে পড়ছে দরজা-জানালার কাচ। ট্রাম্পের রিপাবলিকান সিনেটরদের দিকে কটাক্ষ ছুড়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ— ডাকুন আপনার নেতাকে! ওর জন্যই তো এসব হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টা যে ভয়ানক, সেটা সিনেটররা টের পেলেন আরও কিছুটা পরে। ক্যাপিটলের মূল দরজা শুধু বন্ধ করাই নয়, ভিতর থেকে আসবাবপত্র রেখে সাপোর্ট দিয়ে দিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীরা।
হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ফ্লোর ডিরেক্টর কেইথ স্টার্ন বলেন, “প্রত্যেকে নিজের নিজের আসনে বসে পড়ুন। শান্ত থাকুন।” এর মধ্যেই বাইরে কাঁদানে গ্যাসের মতো কিছু একটা ছোড়া হয় হামলাকারীদের আটকানোর জন্য। এবার ঘোষণা, ‘সিটের নীচে রাখা গ্যাস মাস্ক পরে নিন সবাই’। যেকোনও সময় যেকোনও দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতে পারে বিক্ষোভকারীরা। গোড়ার দিকে যেটা ছিল কৌতূহলের বিষয়, সেটাই হয়ে দাঁড়াল বিভীষিকা।
শেষ পর্যন্ত আর ঝুঁকি নেননি ক্যাপিটলের নিরাপত্তা অফিসাররা। সিনেটরদের বললেন, সুড়ঙ্গ দিয়ে নিরাপদ কক্ষে পৌঁছে যেতে। সেই ভাবেই ফাঁকা করা হল ক্যাপিটল। হাউস সার্জেন্টকে কোনও এক নিরাপত্তা অফিসারকে নির্দেশ দিতে শোনা যায়, “ক্যাপটলকে আমরা যেন নিরাপদ রাখতে পারি, সেটা নিশ্চিত করুন।”
সব মিলিয়ে, রুদ্ধশ্বাস এক নাটকের সাক্ষী থাকল ক্যাপিটল এবং সিনেটররা।