দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তার স্ত্রী ডা. শারমিন আক্তার অন্তরা। তবে এই চিকিৎসক দম্পতির দুই অবুঝ সন্তান এনায়া ও ইন্তেজা জানে না তাদের পিতা-মাতার এই দুর্গতির কথা। সরেজমিনে দেখা যায়, দাদা-দাদি, নানা-নানিসহ স্বজনরা যখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কান্নাকাটি করছিলেন শিশু দুটি তখনো বিস্কুট খাচ্ছিল আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল। তখন এই চিকিৎসক দম্পতির সাড়ে চার বছর বয়সী বড় মেয়ে এনায়া খান নানিকে বলছিল, ‘কেঁদো না নানু, বাবা-মা চলে আসবে নে।’
জানা যায়, বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে দুই সন্তানকে মায়ের কাছে রেখে স্বামী ডা. ইমরানকে সঙ্গে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন অন্তরা। পথিমধ্যে রশিদপুরে বিপরীত থেকে আসা লন্ডন এক্সপ্রেসের বাসটি তাদের বহনকারী এনা পরিবহনের বাসকে আঘাত করে। স্ত্রীর অন্তরার পাশে বসা ছিলেন ডা. ইমরান। দুর্ঘটনায় তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুরুতর আহত হন ডা. অন্তরা। দুর্ঘটনার পর পরই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে শরীর থেকে।
এনা পরিবহনের বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা জানান- দুর্ঘটনার পর তারা (চিকিৎসক দম্পতি) সাহায্যের জন্য চিকিৎকার করছিলেন। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলেও তারা খালি হাতে কাউকে বের করতে পারছিলেন না। শেষে হাতুড়ি, লাঠি দিয়ে গ্লাস ভেঙে তাদের বের করা হয়।
ডা. ইমরানের বাবা (অবসরপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন খান সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ছিলেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে তার। দুজনই চিকিৎসক। ছেলের বউ আর মেয়ে জামাইও চিকিৎসক। নাতি-নাতনি নিয়ে আনন্দেই সময় কাটছিল আমজাদ হোসেন দম্পতির। তবে শুক্রবার আচমকা অন্ধকার নেমে আসে।
ডা. অন্তরার বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, মেয়েটা উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করার পর থেকে বিসিএসের জন্য লেখাপড়া শুরু করে। তার বড় একটি স্বপ্ন ছিল সরকারি হাসপাতালে চাকরি করে গরিব মানুষের সেবা করবে। সেই জন্য মেয়ে জামাই মেয়েটাকে ঢাকায় বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার জন্য নিয়ে রওয়া হয়। এর ঘণ্টা দুই পরেই খবর এলো, তারা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মেয়ে জামাই হলেও ইমরান আমার নিজের ছেলের মতো। ছেলেটা খুবই ভদ্র ছিল। এখনো মেয়েটাকে জানাইনি, তার স্বামী আর নেই। যখন জানবে তখন কী দিয়ে আমি তাকে সান্ত্বনা দেব, বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন আবু বক্কর।
ইমরানদের পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এক নারী বলেন, সকালে ইমরানের বোন ডা. ইন্নরির চিৎকারে আমাদের ঘুম ভাঙে। সে আমাদের ডেকে এই দুর্ঘটনার খবর জানায়।
তিনি বলেন, আমজাদ সাহেবের পরিবার খুবই মেধাবী এবং অত্যন্ত ভদ্র। দীর্ঘদিন ধরে আমরা প্রতিবেশী হিসেবে আছি। কিন্তু এই পরিবারের কেউ জোরে কথা বলেছে এমনটি শুনিনি। ইমরানও খুব নম্র- ভদ্র ছেলে। এরকম মানুষ হয় না।