মাছ আহরণে বিরত থাকা জেলেদের জন্য বিপরীতে ফেব্রুয়ারি থেকে মে ৪ মাস ৪০ কেজি চাল খাদ্য সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হবে। জেলার ৫১ হাজার নিবন্ধিত জেলে এই খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে।চাঁদপুর জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে জেলা টাস্কফোর্স, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিন, সদর ও হাইমচর উপজেলা টাস্কফোর্স জনপ্রতিনিধি, জেলে নেতা ও জেলেদের নিয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা করেছেন। এছাড়াও নদী উপকূলীয় জেলে পাড়া ও মৎস্য আড়ৎগুলোতে জাটকা না ধরার জন্য সচেতনতামূলক সভা, লিফলেট বিতরণ ও ব্যনার সাঁটানো হয়েছে।
হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী এলাকার জেলে বিল্লাল গাজী ও রমহত উল্লাহ বলেন, জাটকা ধরার জন্য সরকার নিষেধ করেন, তখন হাইমচরের জেলেরা তাদের নৌকা ও জাল উপরে উঠিয়ে রাখে। কিন্তু শরীয়তপুর, বরিশালের হিজড়া ও মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর থেকে এক শ্রেণীর মৌসুমী অসাধু জেলে এসে জাটকার অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্রে হাইমচর থেকে জাটকা ধরে নিয়ে যায়। মেঘনা নদীর এই এলাকাটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কড়া নজরদারিতে রাখতে হবে।
একই এলাকার জেলে মো. নোয়াব মিজি ও নাজমুল হোসেন বলেন, জাটকা রক্ষায় প্রশাসন যদি আমাদের সহযোগিতায় চায়, আমরা নিজেদের জন্য হলেও তাদেরকে সহযোগিতা করবো। যে কোন মূল্যে বহিরাগত জেলেদের প্রতিহত করতে হবে। জেলেরা নদীতে প্রতিহত করতে গেলে হামলার শিকার হবে। কারণ বরিশাল ও মোহনপুর থেকে আসা জেলেদের নৌকায় দেশীয় অস্ত্র থাকে এবং তারা একত্রে শতাধিক নৌকা নিয়ে এসে জাটকা ধরে।
তারা আরও বলেন, দুই মাসের জন্য সরকার আমাদের যে খাদ্য সহায়তা দেন, তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি যদি আমাদেরকে কিছু নগদ অর্থ দেয়া হয় তাহলে, কোন রকম সংসার চলবে।
হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ আ. জলিল জানান, জাটকার অভয়াশ্রম হিসেবে চরভৈরবী অন্যতম পয়েন্ট। আমরা স্থানীয় জেলেদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করেছি। তাদেরকে মাছ না ধরার জন্য নিষেধ করা হয়েছে। তারপরেও কেউ নদীতে নামলে আইনানুগ ব্যবস্থা করা হবে।
হাইমচর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, জাটকা রক্ষার জন্য মার্চ-এপ্রিল দু’মাস নির্ধারিত। কিন্তু আমরা জেলেদেরকে প্রশিক্ষণের সময় বুঝাচ্ছি একটি জাটকা রক্ষা হলে কোটি টাকা রক্ষা হয়। জাটকা বড় হলে তারাই আহরণ করবে। এই দু’মাস উপজেলা টাস্কফোর্স রুটিন অনুযায়ী ২৪ ঘন্টা নদীতে দায়িত্ব পালন করবেন।
মতলবউ উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম বলেন, জাটকা সংরক্ষণের জন্য জেলে পাড়া ও আড়ৎগুলোতে মাইকিং করে, লিফলেট বিতরণ ও ব্যানার সাঁটিয়ে প্রচারনা করা হচ্ছে এবং ২৪ ঘন্টা অভিযান চলবে। মাছ আহরণে বিরত থাকা নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে কাল থেকে খাদ্য সহায়তা চাল বিতরণ করা হবে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারি মধ্য রাত থেকে মতলব উত্তর ও হাইমচরে কোস্টগার্ড এবং নৌ পুলিশের সহায়তায় মৎস্য বিভাগ দু’টি টীম কাজ করবে। আমাদের এই কাজে রাতে ও দিনে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ নদীতে অবস্থান করবেন। আইন অমান্যকারী জেলেদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক ভ্রাম্যমান আদালতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অনঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, দুই মাস জেলার ৫১ হাজার ১৯০জন নিবন্ধিত জেলে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকবেন। তাদেরকে আমরা ৪ মাস ৪০ কেজি করে ১৬০ কেজি করে চাল দিব। যাতে করে তাদের কোন ধরণের অসুবিধা না হয়।