সােমাবার দুপুরে ‘বাংলাদেশের ফ্রিজ শিল্পের উপর গবেষণা প্রতিবেদন’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার এই ফলাফল প্রকাশ করেন। গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন মার্কেটিং বিভাগের সহযােগী অধ্যাপক ও এমডব্লিউবি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ড. মাে. নাজমুল হােসাইন।
তারা বলছেন, দেশের শহরাঞ্চলের বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রাধান্য থাকলেও গ্রামাঞ্চলের বাজার দেশিয় ব্র্যান্ডের দখলে। তবে ফ্রিজের বাজার আন্তর্জাতিকভাবে সম্প্রসারণে সরকারের মনোনিবেশ প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্রিজের বাজার এককভাবে দেশি ব্র্যান্ড ওয়ালটনের দখলে ৬৬ শতাংশ। বাকি ১৪ শতাংশ মার্সেল, সিঙ্গার ভিশন, মিনিস্টারসহ অন্যান্যদের দখলে। বিদেশি ব্র্যান্ডের পরিমাণ মাত্র ২০ শতাংশ। এর মধ্যে ১১ শতাংশ বিদেশি ব্র্যান্ড সিঙ্গার, স্যামসাং, শার্প, এলজির দখলে।
গবেষণাটি করেন মার্কেটিং বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান ও (এমডব্লিউবি) সহপ্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, বিভাগের সহযােগী অধ্যাপক ড. মাে. নাজমুল হােসাইন, ড. রাফিউদ্দীন আহমদ এবং গবেষক সাখাওয়াত হােসেন।
২ হাজার ৪৪০ জন ফ্রিজ ব্যবহারীর উপর মাঠ পর্যায় এবং অনলাইজন জরিপ, ১০টি ফোকাস দল আলােচনা, ১০টি রিটেইল ষ্টোর অডিট, ১০জন বিশেষজ্ঞের সমীক্ষা, ৩ হাজার ৮৬০টি অনলাইন ক্রেতার প্রতিক্রিয়া, ইলেকট্রনিক প্রডাক্ট রিভিউয়ের মাধ্যমে ১৯৬টি পাবলিক পােস্ট বিশ্লেষণ এবং ৮টি প্রতিষ্ঠানের ৯টি TVC বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষণাটি করা হয়।
গবেষণার ফলাফলে দেখানো হয়েছে, ২০১৫-২০১৯ এই পাঁচ বছরে ফ্রিজ শিল্প গড়ে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্রিজ ব্যবহারের হার শহরের চেয়ে গ্রাম ও উপ-শহরগুলােতে অতি বেশি হারে বাড়ছে। ফ্রিজ মার্কেট প্রবৃদ্ধির পিছনে মধ্য ও উচ্চ বিত্তের দ্রুত বিকাশ, ছােট পরিবার ও মহিলা কর্মজীবির সংখ্যা বৃদ্ধি, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে উপ-শহরীকরণ প্রক্রিয়া, কম খরচে দেশিয় ফ্রিজ কেনার সক্ষমতা এবং ফিজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতা বান্ধব শর্তাবলীর কথা উল্লেখ করেন তারা।
দেশিয় ব্র্যান্ডের এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার পেছনে রয়েছে নিত্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, যেমন: স্বয়ংক্রিয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইনভার্টার টেকনােলজি, রিয়েল-টাইম টেম্পারেচার ডিসপ্লে, হলিডে মােড, টার্বো মােড়, সুপারকুল মােড ইত্যাদি।
দেশিয় ব্র্যান্ডে এ আধিপত্য ধরে রাখা এবং বাজার সম্প্রসারণে কোম্পানিগুলোকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তারা। সেগুলো হলো, অনলাইনভিত্তিক মার্কেটিং কার্যক্রম বৃদ্ধি করা, ক্রেতা সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন করা, বিক্রয়ােত্তর সেবার মান বৃদ্ধি করা, নির্দিষ্ট সময় পর কোম্পানির উদ্যোগে ফ্রিজ চেক করা ইত্যাদি।
অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান গবেষণা প্রতিবেদন সম্পর্কে বলেন, গ্রামাঞ্চলে ফ্রিজের বাজার সম্প্রসারণ প্রধান কারণ হলো বিদ্যুতায়ন। শহরাঞ্চলের বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রাধান্য থাকলেও গ্রামাঞ্চলে তা শূন্যের কোটায়। দেশের ফ্রিজ কোম্পানিগুলোর আরো ব্যাপক বাজার সম্প্রসারণে সরকারের মনোনিবেশ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।