চাইনিজ খাবারের আড়ালে চেতনানাশক খাইয়ে অচেতন করে তার অশালীন ছবি তুলে কথিত প্রেমিক সটকে পড়ায় রাগে ক্ষোভে অভিমানে আত্মহননের পথ বেঁছে নেয় কিশোরী তামান্না।
এমন অভিযোগে গত মঙ্গলবার রাতে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তামান্নার বাবা রফিকুল ইসলাম টিপু।
নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা এআরএস স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী তামান্না আফরিনের বাবা ও মায়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় ২০১৮ সালে। এর পর থেকে তামান্না ও তার ছোট বোন তাহিয়া থাকতো নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীপাড়া এলাকার নানা হাফেজ মো. আলমগীরের বাসায়। কর্মের সুবাদে বাবা থাকতো অন্যত্র একা। মা জাকিয়া বেগম চাকরি করায় মেয়েদের তেমন দেখভাল করতে পারতেন না। বাবা-মায়ের শিথিলতার সুযোগে তামান্নার সাথে ফেসবুকে পার্শ্ববর্তী জুমির খান সড়কের বখাটে সাদমান গালিবের পরিচয় এবং এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক হয়।
তামান্নার বাবা রফিকুল ইসলাম টিপু জানান, প্রায় ৬ মাস আগে তামান্নাকে চাইনিজ খাবারের আড়ালে চেতনানাশক খাইয়ে নিজ বাসায় নিয়ে যায় গালিব। খবর পেয়ে তার বাবা ও মা গালিবের বাসা থেকে প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তামান্নাকে উদ্ধার করে। ওইদিন গালিব তামান্নার অশালীন ছবি এবং ভিডিও মোবাইল ফেনো ধারণ করে রাখে বলে অভিযোগ করেন টিপু। পরে ওই ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তামান্নার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করে গালিব। ওই ছবি দিয়ে ব্লাকমেইল করে তামান্নার সাথে বিভিন্ন সময় গালিব শারীরিক সম্পর্কে জড়ায় বলে সন্দেহ তার বাবার।
এদিকে ওই অশালীন ছবি নিজ হেফাজতে রেখে সাম্প্রতিক সময়ে গালিব তার কথিত প্রেমিকা তামান্নার কাছ থেকে সটকে পড়ে। গত কিছুদিন ধরে তামান্নার সাথে একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় গালিব। এতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে সে। প্রেমিকের প্রতারণার কারণে রাগে ক্ষোভে এবং অভিমানে গত ২ এপ্রিল দুপুরে নানা বাড়িতে সবার অলক্ষ্যে ফ্যানের সাথে ওড়না বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহনন করে তামান্না। তামান্নার মৃত্যুর পর তার পড়ার টেবিলে অংক খাতার শেষ পৃষ্ঠায় তামান্নার হাতের লেখা একটি চিরকুট (সুইসাইড নোট) পায় তার পরিবার।
চিরকুটে লেখা রয়েছে, ‘আমি আজ সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমার মৃত্যুর জন্য শুধু একজনই দায়ী। তার নাম হলো সাদমান গালিব। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু ও (গালিব) আমার সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চায় না। তাই আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না ভেবে সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমি সাদমানকে অনেক ভালোবাসি, ও বুঝল না। আশা করি আমার মরার পর ও (গালিব) আমার ভালোবাসাটা অনুভব করবে। আমি আর বেশি কিছু বলতে চাই না। বিদায় সাদমান।’
ওই চিরকুট সহ গত মঙ্গলবার সাদমান গালিবের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে তার বাবা রফিকুল ইসলাম টিপু।
ওইদিন তামান্নার লাশ উদ্ধারকারী কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক অলিভ জানান, তামান্নার ব্যবহৃত একটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। মুঠোফোনে কিছু আলামত পাওয়া গেছে।
অভিযোগকারী টিপু জানান, কথিত প্রেমিকের প্ররোচণায় ২ এপ্রিল তার মেয়ে তামান্না আত্মহনন করলো। ৪দিন পর ৬ এপ্রিল তিনি প্রমাণাদী সহ কোতয়ালী মডেল থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্ত সাদমান গালিবকে গ্রেফতার কিংবা তার অভিযোগ মামলা হিসেবে রুজু করেনি। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন তামান্নার মা জাকিয়া বেগম।
তবে এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম।
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, পুলিশ এ বিষয়ে কোন তাচ্ছিল্য করছেন না। কোন শৈথিল্যও দেখাচ্ছে না। ওই মেয়েটির মোবাইল ফোনে পাওয়া বিভিন্ন ছবি এবং তার লেখা চিরকুট যাচাই করা হচ্ছে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবার দেয়া অভিযোগ মামলা হিসেবে রুজু করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।