করোনাভাইরাসের লাগাম টানতে ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার।
তিনি আরো বলেন, ‘শনিবার দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে। কঠোর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাই আমরা ১৪ এপ্রিল থেকে পরিপূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
১৪ এপ্রিল থেকে লকডাউন শুরু হলে মাঝে ১২ ও ১৩ এপ্রিল এই দু’দিনের বিষয়ে কী নির্দেশনা থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১২ ও ১৩ এপ্রিল বিষয়ে লকডাউন নিয়ে রোববার যে প্রজ্ঞাপন জারি হবে সেখানে সব নির্দেশনা থাকবে।
তিনি আরো বলেন, ‘এই অবস্থায় মানুষের ঘরে থাকাটাই জরুরি। মানুষ যদি এই কয়েক দিন ঘর থেকে না বের হয় এবং যে যেখানে আছে এভাবে থাকতে পারে তাহলেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুহার নিম্নমুখী হয়ে আসবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাই মানুষকে কীভাবে ঘরে রাখা যায় সরকার সে ব্যবস্থা করছে।
তিনি বলেন, সারাদেশে গ্রাম, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষ এই লকডাউনে যাতে তাদের খাবারের সমস্যা না হয় এবং খাবারের জন্য যাতে ঘর থেকে বের হতে না হয় সে বিষয়ে সরকার আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এসব ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মানুষ তো সরকারের নির্দশনা মানছে না। মানুষকে সরকারের নির্দশনা মানাতে সেনাবাহিনী মাঠে নামানো হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী নামানোর কোনো তথ্য এখনো আমি পাইনি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন। আর যদি এরকম কোনো সিদ্ধান্ত আসে তাহলে যথাসময়ে নিশ্চয়ই জানতে পারবেন।’
এর আগে শুক্রবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছিলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে জরুরি সেবা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে। ১৪ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত অত্যন্ত কঠোর লকডাউন আসছে।
তিনি আরো বলেন, জরুরি সেবাপ্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ছাড়া সব অফিস ও গার্মেন্টস শিল্প কারখানা বন্ধ থাকবে। লকডাউনে কোনো ধরনের যানবাহন চলবে না।
২০ তারিখের পর কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি দেখে সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত ২০ তারিখের মধ্যেই জানিয়ে দেয়া হবে।’
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণবৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত সারাদেশ শপিংমল, দোকান-পাট, হোটেল, রেস্তোরাঁসহ গণপরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
সরকারের প্রজ্ঞাপনে ১১ দফার নির্দশনায় সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত, ব্যাংক জরুরি প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে খোলার রাখার কথা বলা হয়েছিল।
করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করলেও সরকারি-বেসরকারি কর্মজীবীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত বুধবার থেকে ঢাকাসহ দেশের সকল সিটিতে বাস চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়।
এরপর কয়েক দিন ধরে শপিংমল ও দোকান খুলে দেয়ার দাবিতে দোকান মালিক কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার লকডাউনের মধ্যেই ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শপিং ও দোকানপাট খোলার অনুমতি দেয়।
দেশে মহামারী করোনাভাইরাসে ২৪ ঘণ্টায় আরো ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যা এক দিনে সর্বোচ্চ।
এর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯ হাজার ৬৬১ জনে দাঁড়িয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ওই সময়ের মধ্যে আরো পাঁচ হাজার ৩৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জনে।
সারাদেশে ২৪ ঘণ্টায় ২৪৩টি পরীক্ষাগারে ২৫ হাজার ১৮৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। অ্যান্টিজেন টেস্টসহ পরীক্ষা করা হয় ৩৬ হাজার ৭৭টি নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এ দিকে ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরো ৩ হাজার ৮৩৭ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৩০ শতাংশ।