চলমান করোনা সংকটের দ্বিতীয় ধাপ মোকাবেলায় দেশব্যাপী সরকার ঘোষিত লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নে যশোর পুলিশ যখন মাঠে, সেই সময় ফেসবুক লাইভে এসে যশোরের এক ভ্রাম্যমান চা বিক্রেতার আকুতি ‘খাবার দেন নইলে গুলি করে মেরে ফেলেন।’ এই আকুতিতে সাড়া দিয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে যশোর জেলা পুলিশ তার বাসায় খাবার ও নগদ টাকা পৌঁছে দিয়েছে।
পুলিশের এই উদ্যোগে যশোর ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের বাসিন্দা ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম ও তার পরিবার খুশি। একজন এডিশনাল এসপি খাদ্য ও নগদ অর্থ নিয়ে তার ঘরে ছুটে যাওয়ায় প্রশংসিত হয়েছে পুলিশের এই উদ্যোগ।
দ্বিতীয় দফার ভয়ানক পরিস্থিতি ওভারকাম করতে ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে সরকার নতুন করে গত ১৪ এপ্রিল থেকে আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশ জুড়ে যে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে তা কার্যকর করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে মাঠে রয়েছে পুলিশ। ভোর থেকেই জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে জেলা পুলিশের উর্ধŸতন কর্মকর্তাগণ নিয়মিত টহলে জনসাধারণকে ঘরমুখি করতে কাজ করায় নিজেদের নিত্যকাজে বের হতে পারছেনা দরিদ্র মানুষ। দরিদ্র মানুষের মধ্যে শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের রবিউল সরদার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। পেশায় ভ্রাম্যমান চা বি¯ু‹ট বিক্রেতা। গত দেড় সপ্তাহের লকডাউনে তার কাজ নেই। আর ১৪ এপ্রিল থেকে তিনি প্রায় ঘরবন্দী। খাদ্যর অভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছিলেন রবিউল ইসলাম। ১৭ এপ্রিল ফেসবুক লাইভে এসে আকুতি জানান, ‘খাবার দেন, নইলে গুলি করে মেরে ফেলেন।’ লাইভটি জেলা পুলিশের মিডিয়া মনিটরিং সেলের দৃষ্টিগোচর হয়। বিষয়টি পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারকে অবগত করানো হয় মিডিয়া সেলের পক্ষে। পুলিশ সুপার বিষয়টি দেখেন এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক সার্কেলকে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন। খোঁজ খবর নেয়ার পর ১৮ এপ্রিল সকাল ১০ টায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন, জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক রুপন কুমার সরকারসহ পুলিশের একটি টিম রবিউল ইসলামের কুঠিরে হাজির হন খাদ্য ও নগদ অর্থ নিয়ে। এসময় খুশিতে আপ্লুত হয়ে পড়েন রবিউল ইসলাম সরদার ও তার পরিবারের সদস্যরা।
রবিউল ইসলাম জানান, তিনি ভীষন সৌভাগ্যবান যে পুলিশ সুপার তার মত দিনমজুরের জন্য খাদ্য ও টাকা পাঠিয়েছেন। তিনি কখনও ভাবেননি এমনটি হতে পারে। তিনি পুলিশকে ভূয়সী প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারের নেতৃত্বে করোনাকালে বিশেষ দিক নির্দেশনায় এগিয়ে চলছে যশোরের ৯টি থানা ফাঁড়ি ও ক্যাম্পগুলোসহ অন্যান্য ইউনিটগুলো। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রথমে মানুষকে ঘরে রাখতে সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছে জেলাব্যাপী। কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করতে কঠোর অবস্থানে তার বাহিনী। সর্বোপরি মানবিক কাজ হিসেবে কর্মহীন দরিদ্র মানুষ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দরিদ্র মনুষ মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে খাবার ও করোনা সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করতেও বদ্ধ পরিকর তিনি।