টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
ঘরে থাকছে না মানুষ, ঢাকার সড়ক এখন ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে

ঘরে থাকছে না মানুষ, ঢাকার সড়ক এখন ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে

সরকার চাইছে- মানুষ একটু ঘরে থাকুক, দেশে ফিরুক করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির স্বস্তি। আর তাই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির রাশ টানতে দেশে ঘোষণা হয়েছে বিধিনিষেধ। অথচ মানুষের মনে অন্য কিছু। ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ বিপরীতে সর্বান্তকরণে তারা চাইছে- ঘরের তালা ভাঙতে। সড়কে নেমে এসে লকডাউনের প্রতি দেখাচ্ছে বিদ্রোহ-বিদ্রূপ। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের চাহিদাটুকুও এখন তাদের কাছে অতিপ্রয়োজনীয়, নিতান্তই জরুরি। অবশ্য ব্যতিক্রম যে নেই তাও নয়। কেউ কেউ জীবিকায় টান পড়ার যে কথা বলছেন, সেটিও যথেষ্ট যৌক্তিক। সরকারের এ বিষয়ে আরও মনোযোগী হওয়া দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

দিন যত যাচ্ছে রাজধানীর সড়কগুলোতে বাড়ছে গাড়ির জটলা। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও সড়ক এখন ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। অনেক সিগন্যালে আগের মতো গাড়ির দীর্ঘসারিও চোখে পড়ছে। বর্ধিত সাত দিনের লকডাউনের প্রথম দিন গতকাল বুধবার রাজধানীর মহাখালী, সাতরাস্তা, মগবাজার, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, গুলশান ও উত্তরা এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বোঝাই যাচ্ছে- লকডাউনের এক সপ্তাহ পর সাধারণ মানুষ এখন আর ঘরবন্দি থাকতে চাইছে না। জরুরি সেবার বাইরেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। কর্মচঞ্চল মানুষের পদচারণায় ঢাকা যেন ফিরছে প্রকৃতরূপে। অ্যাপসভিত্তিক সেবা পাঠাও-উবারের সার্ভিস বন্ধ থাকলেও অ্যাপস ছাড়াই ব্যক্তিগতভাবে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার সার্ভিস চলছে। যার কারণে সড়কে আগের চেয়ে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল দেখা যাচ্ছে বেশি। কমে এসেছে পুলিশের তৎপরতাও। তল্লাশিচৌকিও তেমন দেখা যাচ্ছে না। লকডাউনের মধ্যেই কক্সবাজার ছাড়া অভ্যন্তরীণ অন্য রুটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে বেসরকারি দুটি সংস্থা ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার অভ্যন্তরীণ পথে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান আজ বৃহস্পতিবার অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করবে।

সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তঃস্ফূর্ততা না থাকায় প্রথম থেকেই লকডাউনে ঢিলেঢালাভাব ছিল। লকডাউন ঘোষণার দুদিন পর থেকেই রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করতে শুরু করে। রাস্তায় মানুষের চলাচল বাড়ে। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই তা অনেক বেশি দৃশ্যমান।

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণে প্রথম দফায় ৫ এপ্রিল সাত দিনের বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। সেই বিধিনিষেধ মানতে সর্বস্তরের মানুষের ছিল সর্বোচ্চ অনীহা। এরই মধ্যে গত ১৪ এপ্রিল থেকে আবার সারাদেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ দেওয়া হয়। গতকাল শেষ হওয়া সেই লকডাউন আবার বেড়ে গড়ায় আরেক সপ্তাহে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জীবিকার ব্যবস্থা না করে মানুষকে এভাবে ঘরে আটকে রাখা যাবে না। মানুষের চলাচলে জোরপূর্বক বাধা সৃষ্টি করলে বিশৃঙ্খলা বাড়বে। কারণ যে মানুষের খাবার টাকা নেই তাকে জীবিকার সন্ধানে বের হতেই হবে। এ ছাড়া সামনে ঈদ। মানুষের ব্যস্ততা বাড়বে এটিও স্বাভাবিক। সে বিষয়েও সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা জরুরি।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনি কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, লকডাউনের আগের দিনগুলোর মতোই স্বাভাবিকভাবে মানুষ কেনাকাটা করছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারেও উদাসীন ক্রেতা-বিক্রেতা। সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের পরও খোলা থাকছে দোকানপাট। মো. শফিক নামে এক মুরগি বিক্রেতা অবশ্য বললেন, কয়েক দিন ধরে বাজারে ক্রেতা কিছুটা কম। কারণ লকডাউনের আগে মানুষ কয়েক সপ্তাহের খাবার মজুদ করেছে। ঈদের বাজার কেন্দ্র করে সপ্তাহখানেক পর আবার বাজারে ভিড় বাড়বে। মুরগি বিক্রেতা শফিকের পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে একজন বিশ্লেষক বলছেন, কম ক্রেতার সমাগম বলতে শফিক যতটা সংখ্যা বোঝাচ্ছেন; সেই সংখ্যাটাও ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই।

রাজধানীর শান্তিনগর, নয়াপল্টন, মগবাজার, মহাখালী ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার অনেক দোকানপাট খোলা। মহাখালী আইসিডিডিআরবি সড়ক ধরে সাতরাস্তার দিকে এগোতেই কয়েকটি টায়ার-ব্যাটারির দোকান খোলা দেখা গেল। আমাদের সময়কে দোকানিরা বললেন, কয়েক দিন ব্যবসা বন্ধ থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। সামনে ঈদ, আসছে বাড়তি খরচ। তাই বাধ্য হয়ে দোকান খুলতে হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ওই সড়কে গাড়ি সার্ভিসিংয়ের কয়েকটি দোকান খোলা দেখা গেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যারিকেড বসিয়ে রাস্তা সংকীর্ণ করে রেখেছিল পুলিশ। এখন সেই দৃশ্যও কম। সাতরাস্তা, ফার্মগেট ও মহাখালী মোড়ে গাড়ির জটলা দেখা গেছে, যেটি গত কয়েক দিনের চেয়ে বেশি। তেজগাঁওয়ের নাবিস্কো এলাকায় মূল সড়কে দাঁড়িযে থাকা রিকশাচালক বললেন, কেউ এসে একবেলা খাবার দিয়ে যায়নি। আমার খাবার টাকা আমাকে জোগাড় করতে হবে। রিকশা নিয়ে বের না হলে সে টাকা জুটবে কেমনে?

সাতরাস্তা মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সৈয়দ হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, যেতে হবে বনানী। রিকশা কিংবা সিএনজি অটোরিকশা ছাড়া বিকল্প উপায় নেই। রিকশা ভাড়া দিতে পকেট থেকে বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে।

মহাখালী সড়কে এ প্রতিবেদককে দেখে দুটি মোটরসাইকেল এবং একটি প্রাইভেটকারচালক গন্তব্য জিজ্ঞেস করে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অ্যাপস বন্ধ থাকলেও তারা নিজ উদ্যোগে ভাড়ায় গাড়ি চালাচ্ছেন।

একদিকে যেমন রাস্তায় লোকসমাগম বাড়ছে। অন্যদিকে কমছে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা একেবারেই কম। রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশাচালক কিংবা নির্মাণশ্রমিক কারও মাঝেই করোনা ভাইরাসের ভীতি নেই।

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital