তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ৪-৫ দিন আগে রাজধানীর কলাবাগানে সাবেক এমপি আউয়াল তার ব্যক্তিগত অফিসে বসে সাহিনুদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয় সুমনকে। এম এ আউয়াল ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান ও তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব।

সাহিনুদ্দিন হত্যা মামলায় বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একটি মাজার থেকে এমপি আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪। র‌্যাবের পৃথক দল চাঁদপুর থেকে হাসান ও পটুয়াখালী থেকে জহিরুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া এই মামলায় গতকাল ভোরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ ও পল্লবী থেকে সুমন ও রকি তালুকদারকে গ্রেপ্তার করে। ডিবির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মানস কুমার পোদ্দার সমকালকে বলেছেন, এ দু’জনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

গত ১৬ মে বিকেলে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে পল্লবী ডি ব্লকে একটি গ্যারেজের ভেতর সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করা হয়। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের মা আকলিমা বেগম বাদী হয়ে ২০ জনকে আসামি করে পল্লবী থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামি সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল। কুপিয়ে হত্যার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করা হয়। সেটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

মামলাটি বুধবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মিরপুর বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই মামলায় গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোট সাতজনকে। এর মধ্যে ঘটনার পরপরই মুরাদ ও দীপককে গ্রেপ্তার করা হয়।

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের পরিচালক কমান্ডার আল মঈন জানান, সাহিনুদ্দিনকে হত্যার পরই আউয়ালকে ফোনে হত্যার বিষয়টি সুমন নিশ্চিত করে। তাদের মধ্যে কথা হয় ৩০ সেকেন্ড। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার ৪-৫ দিন আগে আউয়ালের কলাবাগানের অফিসে বসে সন্ত্রাসী তাহের ও সুমনসহ আরও কয়েকজন মিলে সাহিনুদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় সুমনকে। ১৬ মে বিকেলে সুমনের নেতৃত্বে ১২-১৪ জন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়। এর বাইরেও আরও কয়েকজন যুক্ত ছিল। এর আগের দিন ১৫ মে সুমন ও বাবুসহ কয়েককজন হত্যার ছক করে। হত্যাকাণ্ডের দুই মাস আগেও সাহিনুদ্দিন ও সুমন গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে পল্লবী থানায়।

র‌্যাব জানায়, পল্লবীর আলীনগর বুড়িরটেকে আউয়ালের একটি আবাসন প্রজেক্ট রয়েছে। সেখানে সাহিনুদ্দিনদের জমি আছে। ওই জমি আউয়াল দখল করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব। আবাসন প্রকল্প দেখভালের জন্য সন্ত্রাসী ব্যবহার করতেন তিনি। জমি দেখে রাখার জন্য সুমনকে প্রতিমাসে তিনি ১০-১২ হাজার টাকা দিতেন। হত্যাকাণ্ডের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে আউয়ালের সঙ্গে।

তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাহিনুদ্দিনের বাড়ি পল্লবীর আলিনগর এলাকায়। জমিজমা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধ চলছিল তার। বিরোধ মেটানোর কথা বলে ১৬ মে বিকেলে তাকে মোবাইল ফোনে ডাকা হয়। সাহিনুদ্দিন ছয় বছরের ছেলেকে নিয়ে মোটরসাইকেলে ডি ব্লকের ৪০ নম্বর বাড়ির সামনে পৌঁছলে সুমন ও টিটুসহ ১৪-১৫ জন মিলে তাকে বাড়ির গ্যারেজে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে চাপাতি, রামদা ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। এ সময় সাহিনুদ্দিনের ছেলে গেটের বাইরে ছিল। পরে তাকে ওই বাড়ি থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় বাইরে বের করে ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে আবার কোপায় তারা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।

নিহতের মা আকলিমার অভিযোগ- পল্লবীর সেকশন-১২ এর আলীনগর আবাসিক এলাকার হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আউয়ালের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের ১০ একর জমি জরবদখলের চেষ্টা করেন আউয়াল। এই জমির মূল্য অন্তত পাঁচ কোটি টাকা। এ বিষয়ে তার স্বামী জৈনুদ্দিন বাদী হয়ে আদালতে দেওয়ানি মামলাও করেছেন। মামলা করায় আসামিরা ক্ষুব্ধ হয়ে সাহিনুদ্দিন ও তার ভাই মাইনুদ্দিনকে গত বছরের নভেম্বরে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। ওই ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে পল্লবী থানায় মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় সুমন গ্রেপ্তার হয়েছিল। জামিনে বেরিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

আকলিমা বলেন, জামিনে বের হয়ে এলাকায় তারা বুক ফুলিয়ে চলে। আমরা সব সময় ভয়ে থাকতাম। যা ভাবতাম শেষে সেটাই হলো। আমার ছেলেকে তারা হত্যা করল।