গত ১৫ মে থেকে কাঞ্চন পৌর এলাকায় গ্যাস সরবরাহ একেবারেই বন্ধ করে দেয়। বিশেষ করে বৈধ গ্রাহকরা এখন চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। গ্যাস ব্যবহার না করেও বিল গুনতে হচ্ছে ঠিকই। এদিকে গ্যাস সরবরাহ চালু না করলে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়ক অবরোধসহ বৃহৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন গ্রাহকরা। তিতাস গ্যাস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাঞ্চন পৌরসভা এলাকায় ঝুট মিলসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৬ ইঞ্চি ও ৮ ইঞ্চি ব্যাসের ১৫০ পিএসআইজি তিতাস গ্যাসের পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। পরে এসব পাইপ লাইনে ১৫০ পিএসআইজি প্রেসার থেকে ৫০ পিএসআইজি প্রেসারে নিয়ে আসা হয়। আর ৫০ পিএসআইজি প্রেসারে আবাসিক সংযোগ নিয়ম অনুযায়ী অনুমোদন দেয়া যায়। পরে কাঞ্চন পৌর এলাকায় তিতাস গ্যাস কোম্পানি বিতরণ লাইন ও আবাসিক সংযোগের অনুমতি দেন।
এরপর গত প্রায় দশ বছর আগে কাঞ্চন কৃষ্ণনগর, কাঞ্চন, কাঞ্চন খাঁপাড়া, দক্ষিন বাজার, পুর্বপাড়া, কাঞ্চন উত্তরপাড়া, কাঞ্চন দাসপাড়া, নাথপাড়া, হাজীপাড়া, কালাদীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্রাহকদের ব্যক্তিগত খরচে তিতাস গ্যাস কোম্পানি ১ ইঞ্চি ও ২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইন স্থাপন করে দেন। আর এসব পাইপ লাইন থেকে গ্রাহকদের প্রায় ৫০০ বৈধ আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়।
এদিকে, বৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার পর হঠাৎ করে সরকার তিতাস গ্যাস সংযোগ অনুমোদন বন্ধ করে দেন। আর বন্ধ করে দেয়ার সুযোগে কাঞ্চন পৌরাঞ্চলসহ ভোলাব ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীসহ স্থানীয় দালালরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে গ্যাস সংযোগ দেয়ার নামে জন প্রতি ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে নেয়। আর এসব টাকা কেউ গরু-ছাগল বিক্রি করে, কেউ স্বর্ণালংকার বিক্রি করে, কেউ জমি বিক্রি করে, আবার কেউ সুদে বা দার-দেনা করে দিয়েছেন তাদেরকে। সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে নিজের মতো করে নিম্নমানের পাইপ লাইন স্থাপন করে প্রায় ৫ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। আর এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বৈধ করার প্রতিশ্রুতিও দেয়। শুধু তাই নয়, প্রায় ১০টি রেষ্টুরেন্টে অবৈধ ভাবে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। এসব রেষ্টুরেন্টে একাধিকবার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে জেল-জরিমানা করলেও পুনরায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ চালু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে তারা।
এদিকে গত ১৫ মে থেকে কোন প্রকার নোটিশ বা ঘোষনা ছাড়াই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে বৈধ গ্রাহক ও অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের ক্ষোভের শেষ নেই। গ্যাসের চুলায় রান্না করতে না পেরে খাবার দোকান গুলোতে ভীড় করছেন। আবার কেউ কেউ মাটির ও টিন দিয়ে বানানো চুলায় রান্না করছেন। আর অপেক্ষা করছেন কখন গ্যাস সরবরাহ চালু হয়। গ্যাস সরবরাহ চালু না করলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মানববন্ধন, এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক অবরোধসহ বৃহৎ আন্দোলন করবেন বলে হুশিয়ারী দিয়ে যাচ্ছেন। বৈধ গ্রাহকরা জানান, তারা নিয়মিত গ্যাস বিল দিয়ে যাচ্ছেন। কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। গত এক সপ্তাহ ধরে গ্যাস নেই কিন্তু বিল গুনতে হচ্ছে ঠিকই। এছাড়া এলাকার ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও দালালরা অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়েছেন। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা কাজতো প্রশাসনের গ্রাহকদের না। তারপরও প্রশাসনকে বৈধ গ্রাহকরা সহযোগিতা করবে। দ্রুত গ্যাস সংযোগ চালুর জন্য তারা যথাযথ কতৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিতাস গ্যাসের জোবিঅ সোনারগাঁও যাত্রামুড়া অফিসের ব্যবস্থাপক মেজবাউর রহমান জানান, কাঞ্চনে বৈধ গ্রাহকের তুলনায় অবৈধ গ্রাহক বেশি হওয়ায় সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে ৫ শতাধিক আর অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারী রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। ঈদের পর থেকে প্রথমে গ্যাসের প্রেসার কমিয়ে দেওয়া হলেও গত চারদিন ধরে গ্যাসের সরবারহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকের ২-৩ বছরের গ্যাস বিল বাকী রয়েছে। তবে বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারী যদি নিশ্চয়তা প্রদান করেন কাঞ্চনে কোন অবৈধ সংযোগ থাকতে দিবে না তাহলে তাদের গ্যাস সংযোগ পূনরায় দেওয়া ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ চিন্তা করবে।
এ ব্যপারে কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের কারণে বৈধ গ্রাহকরা কেন হয়রানির শিকার হবে। গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন নিয়ে বৈধ গ্রাহকরা কেন অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ঝগড়া করতে যাবে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তিতাস গ্যাস কোম্পানি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিক। আমিও এতে সহযোগিতা করবো। আর যারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জন প্রতি ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করে নিয়েছেন বৈধ করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমার কাঞ্চন পৌরসভার বৈধ গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ করার জন্য অনুরোধ করছি।