টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
ধ্বংসস্তূপে নিজের ঘরটাও চিনতে পারছেন না অনেকে

ধ্বংসস্তূপে নিজের ঘরটাও চিনতে পারছেন না অনেকে

আগুন যখন দাউ দাউ করে জ্বলছিল, তখন চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে পড়েন রফিকুল

আগুনে পুড়ে গেছে মহাখালীর সাততলা বস্তির বাসিন্দা রিকশাচালক রফিকুল ইসলামের ভাড়া করা ঘর। যে ঘরে ছিল একখানা খাট, একটি টিভি, একটি ফ্রিজসহ সংসারের আরও অনেক কিছু। আগুন যখন দাউ দাউ করে জ্বলছিল, তখন চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে পড়েন রফিকুল। একমুহূর্ত দেরি না করে দুই ছেলে সুমন আর সজীব এবং স্ত্রীকে নিয়ে দৌড়ে চলে যান রাস্তায়। ঘণ্টা তিনেক পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে ঘরের সামনে আসেন রফিকুল। ততক্ষণে সব পুড়ে ছাই।

দিনের পর দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের টাকায় সাজানো ঘর হারিয়ে রফিকুল এখন নির্বাক। কোথায় থাকবেন, সন্তানদের মুখে কীভাবে খাবার তুলে দেবেন, এমন সব চিন্তা তাঁকে ঘিরে ধরেছে। ঘরে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ছিল। তা-ও পুড়ে ছাই। হাতে একটি পয়সা না থাকায় কিছুই ভাবতে পারছেন না রংপুরের রফিকুল। রফিকুল বলেন, ‘আমার ঘরের একটা জিনিসও নিতে পারিনি। গায়ে একটা গেঞ্জি ছিল। সে অবস্থায় বেরিয়ে গেছি। আমি রিসকা চালাই। রিসকা চালিয়ে যা জিনিস কিনছিলাম, সব পোড়া শেষ।’

কেবল রফিকুল নয়, তাঁর মতো সাততলা বস্তির আরও বহু মানুষ তিন ঘণ্টার ব্যবধানে পথে বসে গেছেন। মহাখালীর সাততলা বস্তিতে আগুন লাগে আজ সোমবার ভোররাত ৪টায়। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে সাতটার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে কেউ মারা না গেলেও পুড়েছে কয়েক শ ঘর। ভোররাতে আগুন থেকে বাঁচতে যে যেভাবে পেরেছেন ঘর ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। আবার যখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, তখন ছুটে আসেন নিজের ঘরটি কী অবস্থায় আছে তা দেখতে। আগুনে এতটাই পুড়েছে যে অনেকে তাঁর নিজের ঘরও চিনতে পারছিলেন না। সেখানে ছিল শুধু আহাজারি।

সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শহিদুল ইসলাম নিজের ঘরে এসে দেখেন, সব পুড়ে গেছে। ঘরে ছিল স্ত্রীর কানের দুল, হাতের বালা। পোড়া ঘরের জিনিসপত্রের ভেতর সেগুলো খুঁজছিলেন। হঠাৎ করে তাঁর চোখ যায় পোষা পাখির খাঁচার দিকে। আগুন লাগলে নিজেরা বের হয়ে গেলেও পাখির কথা ভুলে গিয়েছিলেন। শহিদুল দেখতে পান, পাখি দুটি আগুনে পুড়ে গেছে।

সালমা খাতুন নামের এক নারী আক্ষেপ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সবকিছু তো আগুনে পুড়ে গেছে। অবলা পাখি দুটিও মারা গেল।’

পোশাককর্মী নাসরিন কল্পনাও করেননি, অনেক কষ্ট করে জমানো ১৫ হাজার টাকা মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। সোমবার ভোরের আগুনে নাসরিনের ১৫ হাজার টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সময়ের ব্যবধানে আগুন যখন নিয়ন্ত্রণে আসে, তখন নাসরিন ফিরে আসেন তাঁর ঘরে। দেখেন, ঘরের সবকিছু পুড়ে গেছে। তবু নাসরিন ছাইয়ের মধ্যে পয়সা খুঁজতে থাকেন। নাসরিন বলেন, ‘টাকা কন, পয়সা কন, সব পুড়ে গেছে। শুধু গায়ের কাপড়টুকু পোড়া বাকি আছে। সংসার করতি যা লাগে, তার সবই আমাদের ছিল। কিন্তু এখন কিছুই নেই। আমাদের এমন কোনো পরিস্থিতি নেই যে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াব।’ নাসরিনের মতো আরও বহু নারী পোড়া ঘর দেখে কাঁদতে থাকেন। মুহূর্তের মধ্যে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার বেদনা তাঁদের চোখে–মুখে।

বস্তির নিম্ন আয়ের এসব মানুষের বেশির ভাগ অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে যুক্ত। কেউ রিকশা চালান, কেউবা হকারি করেন। পুরুষের পাশাপাশি বেশির ভাগ নারী গৃহকর্মীর কাজে যুক্ত।

ফেন্সি খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী গেছিল কাজে। এহলা (একলা) এহলা (একলা) তো আর মালসামানা (মালামাল) নিয়ে যাবার পারিনি। আবার আমার ঠ্যাং ভাঙা। দুনিয়ার জিনিস ছিল ঘরে। মানসের বাসায় কাজ করে এসব জিনিস কিনেছিলাম। রাতেরে রাত কইছি না, দিনেরে দিন কইছি না। এই জিনিসগুলো আমি কষ্ট করে করছি।’

সংসারের সব জিনিসপত্র পুড়ে যাওয়ায় সাততলা বস্তির শত শত মানুষ মুহূর্তের মধ্যে পথে বসে গেছেন। আবার ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এসব মানুষ সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।

আগুনে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া লিটন মিয়া বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের দিকে একটু তাকাই, তাহলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াইতে পারমু। আমরা সরকারের একটু সহযোগিতা চাই।’

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital