করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। গতবছর করোনা সংক্রমণ শুরুর পর এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। এ বছরও সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। পরীক্ষা গ্রহণে শিক্ষা প্রশাসন নানা পরিকল্পনা করলেও তা বাস্তবায়নের সুযোগ মিলছে না। এর পরও এ দুটি পাবলিক পরীক্ষার জন্য তিন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে শিক্ষা বোর্ড।
শিক্ষা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আগস্টে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা গেলে এসএসসি ও এইচএসসির যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করা হয়েছে তার ভিত্তিতে পরীক্ষা নেওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়াকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু তা না হলে তারা আরও দুটো কৌশল নিয়ে ভাবছেন। তবে এগুলোর কোনোটিই এখনো চূড়ান্ত নয়। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে তাদের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার ফলের ৫০ শতাংশ আর ৫০ শতাংশ নম্বর স্কুল পারফরম্যান্স বা অ্যাসাইনমেন্টের ওপর মূল্যায়ন করে ফল ঘোষণা করা হতে পারে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার ২৫ শতাংশ ও এসএসসি-দাখিল পরীক্ষার ৫০ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ নম্বর অ্যাসাইনমেন্টের ওপর মূল্যায়নের ভিত্তিতে ফল ঘোষণা করা হতে পারে। অবশ্য অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক মূল্যায়ন বিজ্ঞানসম্মত হবে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ দুই স্তরের পরীক্ষার্থীদের ভিন্নভাবেও মূল্যায়ন করা হতে পারে। পরীক্ষা ছাড়া বিকল্প কোন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে তা নির্ধারণে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। তারা এ সংক্রান্ত গাইডলাইন দিলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তা চূড়ান্ত করা হবে। কমিটিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের প্রতিনিধি, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রয়েছেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, পরীক্ষা ছাড়া কীভাবে মূল্যায়ন সম্ভব সে সংক্রান্ত পরামর্শ ও গাইডলাইন তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এসএম আমিরুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন করার সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। এসএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করে বিজি প্রেসে পাঠানো হয়েছে। এইচএসসির প্রশ্নপত্র তৈরি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে পরীক্ষা মূল্যায়ন সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির গাইডলাইন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে পাঠালে সেটি অনুসরণ করে ফল প্রকাশ করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বলেন, এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে কীভাবে পাস করানো যায় সেটি নিয়ে নানা ধরনের চিন্তাভাবনা চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত নানা ধরনের তথ্য চাওয়া হচ্ছে। আমরা তা সংগ্রহ করে পাঠিয়েছি। এসব তথ্যের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব না হওয়ায় ২০২০ সালে এইচএসসি অটোপাস করা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। এখন ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের চলতি বছরের মধ্যেই পরীক্ষা নিয়ে বা বিকল্প পদ্ধতিতে পাস না করালে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হবে। এ কারণে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিকল্প পদ্ধতিতে পাস করানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বিকল্প পদ্ধতিতে পাস করাতে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও কলেজ) অধ্যাপক শাহেদুল খবির বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করানোর পরিকল্পনা চলছে। কীভাবে এটি শুরু করা যায় তা নিয়ে কাজ চলছে। যেহেতু এ দুই স্তরের শিক্ষার্থীরা এক বছরের সিলেবাস থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এ কারণে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে তাদের শিখন-জ্ঞান তৈরি করা হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্লাস-পরীক্ষায় ঝুঁঁকি থাকায় এমন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে শিগগিরই পরীক্ষার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের যাতে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি না হয় সে জন্য সর্বোচ্চ নজর রাখা হচ্ছে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষা নিতে না পেরে এসএসসি ও জেএসসির ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ করা হয়। এ ছাড়া বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ করা হয়।