বিআরটির উদাসিনতায় নওগাঁয় রুট পারমিট ও ফিটনেস বিহীন গাড়িতে রাস্তায় যেন মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির এ সময়ে জমি চাষাবাদের জন্য অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয়তা থাকলেও ট্রলি, ট্রাক্টর,এবং ভুটভুটির যথেচ্ছা অপব্যবহার হচ্ছে। কৃষি কাজে সহায়ক যন্ত্রপাতিগুলোকে যানবাহনে রূপান্তরিত করে কোন প্রকার নিয়ম নীতি না মেনেই গ্রামীণ সড়কগুলোতে অবাধে চলছে ওই সব যানবাহন। নওগাঁ জেলায় বিভিন্ন সড়কে দেখা মিলেছে খড়,ইট,বালু ও মাটি বহনকারী ট্রলি, ট্রাক্টর ভুটভুটি’র। দিনদিন বেড়েই চলেছে ওই সব অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্য।
অপরদিকে বেপরোয়া চলাচলের কারনে প্রতিনিয়তই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা । সড়ক গুলোতে অকালে ঝরছে তাজা প্রাণ। অনেককেই বরন করতে হচ্ছে পঙ্গুত্ব। কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্য পূরনে এসব যান বিদেশ থেকে আমদানি করার অনুমতি প্রদান করে থাকে সরকার। কৃষি কাজের জন্য এসব পাওয়ারট্রিলার ট্রাক্টর মেশিন ক্রয় করা হলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা বডি লাগিয়ে ব্যবহার করছে ইট,বালু,মাটি,বাঁশ,কাঁচামাল ও সকল প্রকার পণ্যসহ যাত্রী পরিবহনের কাজে। এসকল যানবাহন বেপরোয়া গতিতে চলার কারনে যেমন ঘটছে দুর্ঘটনা ঠিক তেমনি পরিবেশ ও শব্দ দূষনের সাথে সাথে দ্রুতই নষ্ট হয়ে পরছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট গুলো।
দূষণের কারণে সব ধরনের ট্রাক্টর ও ট্রলি চলাচল অবৈধ ঘোষণা করে সরকার এবং ট্রাক্টর ও ট্রলি আটক করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কিন্তু সেই আইনের কোন তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের সামনেই অবাধ বিচরণ করছে লাইসেন্স বিহীন চালক দ্বারা চালিত ভয়ংকর এই বাহনগুলো। এসব গাড়ির নেই কোন ফিটনেস ও রেজিষ্ট্রেশন , নেই কোন হর্ণ ও গতি নিয়ন্ত্রক।এসব গাড়ির বিকট শব্দে পথচারী সহ এলাকাবাসীও অতিষ্ঠ। এসব গাড়ি চালাতে লাগছেনা কোন প্রকার ড্রাইভিং লাইসেন্স। যার দরুন প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে।
এ বিষয়ে পথচারীরা বলেন, ইট বালু মাটি ভর্তি এসব ট্রাক্টর গাড়ির পেছনে রাস্তায় চলাচল অসম্ভব বিপদজনক। বেপরোয়া গতি ও বিকট শব্দে পরিবেশ ও সড়কগুলোর মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে এবং প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। গ্রামীণ রাস্তাঘাট গুলো চলাচলের জন্য অনুপযোগী হয়ে পরেছে এসব যানবাহনের কারনেই। আর সবসময় প্রশাসনের সামনে দিয়েই চলাচল করছে এ ধরনের যানবাহন। এসব গাড়ির অবিরত চলাচলের কারনে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে পথিকের জীবন। অবৈধ এই যানবাহন গুলো বন্ধে প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ দাবী করেন পথচারী ও সচেতন মহল ।
এ সব ট্রাক্টর চলাচল করার কারণে অনেক রাস্তার কার্পেটিং উঠে গেছে। কোথাও কোথাও খোয়া-বালুর আস্তরণ পর্যন্ত নেই। সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় খানাখন্দ। মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। দুই পাশ ভেঙে সঙ্কুচিত হয়ে গেছে রাস্তা। তার পরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলার কিছু রাস্তা দিয়ে এখন আর যানবাহন চলাচল করছে না। দুর্ঘটনা এড়াতে বিকল্প রাস্তায় চলাচল করছে এলাকার মানুষ। বেহাল এ রাস্তাটি নওগাঁর মান্দা উপজেলার ফেরিঘাট থেকে পাঁঠাকাটা-শিবগঞ্জ হয়ে সংযুক্ত হয়েছে মহাদেবপুর উপজেলা সদরের সঙ্গে। আত্রাই নদীর পূর্বতীরের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ এটি। প্রয়োজনে কিছু লোক পায়ে হেঁটেই চলাচল করছেন। অথচ একসময় এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ট্রাক, ট্রাক্টর, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, চার্জারভ্যান ও ভটভটিসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করত। নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত হওয়ায় মান্দা-মহাদেবপুর যাতায়াতের জন্য এ রাস্তাটি ব্যবহার করতেন বেশির ভাগ পথচারী।
এলাকাবাসীদের অভিযোগ, নষ্ট হওয়া রাস্তা রক্ষার জন্য বালুবাহী ট্রাক্টর ও ট্রাক বন্ধের দাবিতে একাধীক মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনও হয়েছে। ইটভাটা ও বালুমহালের ইজারাদারগণ অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় ট্রাক্টর গুলো বন্ধ হচ্ছে না। রাস্তাটি সংস্কারের দাবিতেও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেই চলেছে এলাবাসী। বর্তমানে জেলার একাধীক উপজেলায় ট্রাক্টর গুলো মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও দাবি করেন তারা। রুট পারমিট ও ফিটনেস বিহীন গাড়ি তীব্র যানজটের। ট্রাক্টর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অবৈধ ভাবে রাস্তার দুইপাশে এলোমেলো ভাবে গাড়ি গুলো দাড় করিয়ে রেখে সরু রাস্তাকে আরো সরু করে ফেলেছে তারা। এছাড়া শহরের যানযট থেকে মুক্তির জন্য মরিয়া হয়ে আছে নগরবাসী। শত চেষ্টা করেও যানযট নিরসন করতে যেন ব্যর্থ হচ্ছে জেলার ট্রাফিক বিভাগ।
নওগাঁ জেলা ট্রাফিক ইনেন্সপেক্টর (টিআই) রেজাউল বলেন, ট্রাক্টর কৃষিকাজে ব্যাবহার করার কথা কিন্তু ট্রলি লাগিয়ে রাস্তা নামিয়েছে। রাস্তা রক্ষার জন্য বালুবাহী ট্রাক্টর ও ট্রাক মেইন রোড়ে চলাচল বন্ধের জন্য আমারা চেষ্টা করছি। চলতি মাসেও ৬০ থেকে ৭০টি মামলা দিয়েছি। ট্রাক্টরের কোন রোডপারমিট না থাকায় পরতে হচ্ছে বেকায়দায়।
বিআরটিএ নওগাঁ উপ-সহকারী পরিচালক স্বদেশ কুমার দাশ জানান, ট্রাক্টর গুলো কৃষিকাজে ব্যাবহার করার জন্য সরকার আমদানি করিয়েছে। সেখানে সরকারি কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ট্রলি লাগিয়ে রাস্তা নামিয়ে মাটি বহণ করছে। আমরা প্রতিমাসে বিভিন্ন রকম মোবাইকোর্ট পরিচালনা করেও প্রতিকার হচ্ছে না।