টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং

মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং

ঢাকায় আবারো দিন দিন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। বাড়ছে কিশোর অপরাধ । স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরোনোর আগেই কিশোরদের একটা অংশের বেপরোয়া আচরণ এখন রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় আতঙ্কের বড় কারণ।

ডিএমপির অপরাধ পর্যালোচনার তথ্য অনুযায়ী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ৪০টির মতো কিশোর গ্যাং রয়েছে। প্রতিটি গ্যাং’র সদস্য সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন। এদিকে সারা দেশের প্রত্যন্ত এলাকাতেও এখন কিশোর গ্যাং সক্রিয়। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা এদের ব্যবহার করেন। সেই ক্ষমতায় গ্যাংগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। হত্যা ছাড়াও ধর্ষণ ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তথ্যমতে, যে কিশোররা ওইসব কেন্দ্রে আছে তাদের ২০ শতাংশ হত্যা এবং ২৪ শতাংশ নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি। ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সের কিশোররাই বেশি অপরাধে জড়াচ্ছে। কিশোররা, চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে বলে কেন্দ্রের তথ্যে জানা যায়। আর দেশের মোট জনসংখ্যার চার কোটি শিশু-কিশোর।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার নানা উপাদান এখন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে বিদ্যমান। দেশের সামাজিক অবস্থা, দুর্নীতি, অপরাধ, রাষ্ট্রীয় এবং পরিবারের মধ্যে যে অপরাধের বীজ রয়েছে কিশোররা তার বাইরে নয়।

মনোবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, পারিবারিক সংস্কৃতি ভেঙে পড়েছে। সেজন্য এই গ্যাং কালচার থামানো যাচ্ছে না।

অভিভাবকরা বলছেন, কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে পরিবারের ভূমিকাই সবচেয়ে বড়। পিতা-মাতা সন্তান জন্ম দিয়েছে। তাই দায়-দায়িত্বও পিতা-মাতাকেই নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, নিম্নবিত্ত পরিবারে যেমন বাবা-মা দুইজনই কাজে বেরিয়ে যান, তেমনি মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারেও বাবা-মা সন্তানকে সময় দেন না। তারা নানা ধরণের গেম, সিনেমা দেখে, একাকীত্বের কারণে অপরাধী হয়ে ওঠে। আর সমাজ ও রাষ্ট্রে অপরাধ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারও তাদের অপরাধে প্রলুব্ধ করে। রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার শিশুদের জন্য শিশুবান্ধব পরিবেশ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাদের মধ্যে মূল্যবোধ তৈরি করতে পারছে না। যার পরিণতি আমরা এখন দেখছি।

অন্যদিকে কিশোরদের সংগঠিত হয়ে অপরাধে জড়ানোকে বলা হচ্ছে ‘গ্যাং কালচার’। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নানা তৎপরতার পরও থামানো যাচ্ছে না এই ‘গ্যাং’ কে।

সোমবার রাজধানীর সূত্রাপুরে দুই গ্রুপ কিশোরের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে একজন কিশোর নিহত ও একজন গুরুতর আহত হয়েছে। এই ঘটনায় তিন কিশোরকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এবিষয়ে সূত্রাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মাদ মামুনুর রহমান বলেন, নিহত কিশোর অনন্তের বাবা বাদী হয়ে ৬ কিশোরের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেছে। ওই মামলার আসামি তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। আর যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৫।

সোমবার ঘটনায় সাজু আহমেদ (১৪) নামে একজন কিশোর আহত হয়েছে। তিনি জানান, তারা ৮ থেকে ৯ জন নামাজ পড়ে ঘোরাফেরা করে বাসায় ফেরার পথে ফরাশগঞ্জ ঘাট এলাকায় সাজুকে মারধর করে ফেরদৌসসহ ১০ থেকে ১২ জন। এসময় অনন্ত প্রতিবাদ করতে এগিয়ে গেলে ফেরদৌস অনন্তের পেটে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাত করেন। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত অনন্ত স্থানীয় জুবলী স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। দুই ভাইয়ের মধ্যে অনন্ত ছিল ছোট।

সূত্রাপুর থানার ওসি বলেন,গত ১০ মার্চ একটি চাকুসহ অনন্তকে আমরা আটক করেছিলাম। পরে তার বাবা মুচলেকা দিয়ে নিয়ে যায়। তাকে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো। দুই দিন আগে আবার ঢাকায় এসেছে। আজই তার গ্রামে চলে যাওয়ার কথা ছিলো। এই হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে ১৬ বছরের কিশোরের সামনে ১৪ বছরের কিশোরের সিগারেট খাওয়ায় ‘সিনিয়রের ’সম্মানহানি হয়েছে বলে। এটা নিয়েই আসলে তাদের বিরোধ।

এবিষয়ে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক নেহাল করিম বলেন, আইনের শাসনও এক্ষেত্রে অনেকটা দায়ী। আর পারিবারিক সংস্কৃতিরও অভাব। পাশাপাশি ঢাকা শহরে খেলার মাঠ নেই। আমরা ছোটবেলায় পড়ার বাইরে খেলাধুলা করে সময় কাটাতাম। আর এরা তো মহল্লার মোড়ে প্রাচীরের উপর বসে আড্ডা দেয়। সেখানে ভালো কোনো আলোচনা হয় না। আরেকটা বিষয় হলো, অপেক্ষাকৃত নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেরাই এই ধরণের গ্রুপে বেশি জড়াচ্ছে। তারা মাদকাসক্ত হচ্ছে, সেখান থেকে চুরি-ছিনতাই করছে।

তিনি বলেন, উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেরাও যে এমন গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়ছে। এ কারণেই তো বলছি, পারিবারিক সংস্কৃতি যতোদিন গড়ে না উঠবে, এ থেকে পরিত্রাণের পথ নেই।

এর আগে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের দুই শতাধিক সদস্যকে আটক করে সংশোধনাগারে পাঠায়। মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ‘স্টার বন্ড গ্রুপ’র ১৭ সদস্যকে আটক করে এক বছর করে সাজা দেয়া হয়।

এছাড়া ‘জুম্মন গ্রুপ’, ‘চান-জাদু (জমজ ভাই) গ্যাং’, ‘ডেভিল কিং ফুল পার্টি’, ‘ভলিয়ুম টু ও ভাণ্ডারি’সহ বিভিন্ন নামে কিশোর গ্রুপ রয়েছে। এর আগে বরগুনার ‘নয়ন বন্ড গ্রুপ’ ও দেশজুড়ে আলোচনায় আসে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, এসব গ্যাং কালচারের কিশোরদের অধিকাংশই মাদকসেবী। মাদক এমন একটি জিনিস সেটা ব্রেনের নার্ভকে নষ্ট করে দেয়। ফলে তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না বা মুহূর্তেই সে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এসব কারণে কিশোরদের মধ্যে অপরাধ-প্রবণতা বাড়ছে এবং খুনোখুনির ঘটনা বেশি হচ্ছে। এই কিশোররা নিজেকে ক্ষমতাবান করতে চায়। এ জন্য গড়ে তোলে গ্যাং।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, এখানে পরিবার ও সমাজের সঙ্গে রাষ্ট্রেরও দায় আছে। রাষ্ট্র ও সমাজে ঘুস, দুর্নীতি থাকলে আপনি ভালো সমাজ আশা করতে পারেন না। যেখানে ন্যায় বিচার নেই, সেখানে আপনি কিশোরদের কাছে আলাদাভাবে কীভাবে মূল্যবোধ আশা করেন, ভালো আচরণ আশা করেন?

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital